BangladeshWorld

বাংলাদেশের উন্নয়নে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের গৃহীত পদক্ষেপ: এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের উন্নয়নে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের গৃহীত পদক্ষেপ: এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ

“বাংলাদেশের উন্নয়নে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের গৃহীত পদক্ষেপ: এক তুলনামূলক বিশ্লেষ”

Copyrighted by https://thenewsalley.com

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের প্রতিনিধি। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যেখানে কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে ২০২১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের প্রশাসনিক নীতিমালা এবং বাংলাদেশে সম্পর্কিত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে উভয়ের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপ

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময় তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়। এই নীতির প্রভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বহির্বিশ্ব সম্পর্ক কিছুটা দুর্বল হলেও, বাণিজ্যিক দিক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাংলাদেশকে প্রভাবিত করে। ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপর জোর দেয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার হিসেবে অবদান রাখে। বাংলাদেশের পোশাক খাতকে লক্ষ্য করে তার প্রশাসনের কিছু বাণিজ্য নীতি প্রণীত হয়, যা কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক বাধার সম্মুখীন হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি কখনো কখনো ব্যবসায়িক চাপ সৃষ্টি করে।

 

নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা কৌশল বজায় রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সাথে অংশীদারিত্ব বাড়ায়। এছাড়া, সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

 

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার সমস্যা সমাধানে তার প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এই সংকটের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তখন তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ ছিল, যা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কোনো কূটনৈতিক সহায়তা সরবরাহ করেনি।

 

কমলা হ্যারিসের পদক্ষেপ

 

কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অবস্থান থেকে হ্যারিস মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় আর্থিক সাহায্য ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন এবং তাদের জীবনের মানোন্নয়নে সহায়তা পাওয়া গেছে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কমলা হ্যারিস বাংলাদেশের সাথে একাধিক চুক্তি ও প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির জন্য সহায়তা প্রদানকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তারা বেশ কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি আরও জোরদার হয়েছে।

 

বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করার দিকেও বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন বেশ মনোযোগী ছিল। হ্যারিসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য মার্কেটে প্রবেশাধিকার বাড়াতে সহায়তা করে, বিশেষ করে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও সামাজিক মানদণ্ড উন্নত করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। শ্রম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের আরও সুযোগ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়।

 

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের নীতিমালার তুলনায়, বাংলাদেশের উপর তাদের প্রভাব সম্পূর্ণ আলাদা। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি বাংলাদেশের বাণিজ্য ও নিরাপত্তা খাতে কিছু প্রভাব রাখলেও, মানবাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন বাংলাদেশে মানবাধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উদ্যোগে অগ্রগামী ভূমিকা রাখে।

 

বাণিজ্য নীতিতে ট্রাম্পের প্রভাব স্বল্পমেয়াদী হলেও, হ্যারিসের প্রশাসন বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে আরও দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে সহায়তা করেছে এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। রোহিঙ্গা সংকটের মতো মানবিক সমস্যা মোকাবিলায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসনীয়, যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

 

অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে হ্যারিস প্রশাসনের উদ্যোগ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

 

সারসংক্ষেপ

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের বাংলাদেশ সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলি ভিন্ন এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির মাধ্যমে পরিচালিত। ট্রাম্পের সময় বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও, কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। এই ভিন্ন নীতিমালা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থায়িত্ব এবং উন্নয়নের জন্য ভিন্ন ধারার দিকনির্দেশনা দেয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button