ইসলামি ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস রজব, যা চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের একটি। এই মাসের মর্যাদা আল্লাহতায়ালা নিজেই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এটি এমন একটি মাস, যখন নফল ইবাদত, রোজা রাখা, দান-সদকা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ রয়েছে। রজব মাসকে রমজানের প্রস্তুতির মাস বলেও মনে করা হয়। মুসলিমরা এই মাসে নিজেদের আত্মিক উন্নতির জন্য বিশেষ আমল করে থাকে।
রজব মাসের গুরুত্ব
রজব মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। কোরআনে সূরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারো, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।” এই চারটি মাসের মধ্যে রজব অন্যতম।
১. হারাম মাসের অন্তর্ভুক্ত:
রজব মাসকে হারাম মাস বলা হয় কারণ এই মাসে যুদ্ধ, বিবাদ এবং অন্যায় কাজ নিষিদ্ধ। এ মাসে মুসলিমদের বেশি বেশি ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির প্রতি মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।
২. ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা:
রজব মাসে ইসলামের মহান এক ঘটনা ঘটে, যা মেরাজ নামে পরিচিত। এই রাতে মহানবী (সা.) সাত আসমানের ওপরে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা মুসলিমদের বিশ্বাস ও প্রার্থনার ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
৩. রমজানের প্রস্তুতি:
রজব থেকে শুরু হয় পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি। এই মাসে নফল রোজা রাখা, দোয়া করা এবং পাপ থেকে মুক্ত থাকার অনুশীলন রমজানের জন্য আত্মিকভাবে প্রস্তুত করে।
রজব মাসের করণীয় আমল
মুসলিমদের জন্য রজব মাসে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা আত্মশুদ্ধি এবং সওয়াব অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. ইবাদত বৃদ্ধি:
রজব মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।
নফল নামাজ পড়া।
নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা।
আল্লাহর জিকির করা।
২. রোজা রাখা:
রজব মাসে নফল রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রজব মাসে রোজা রাখে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এমনকি এক দিনের রোজাও আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।
৩. তওবা ও ইসতেগফার:
নিজের ভুলত্রুটি ও পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার অন্যতম সেরা সময় হলো রজব মাস। প্রতিদিন ইসতেগফার করা আত্মার পবিত্রতা বাড়ায়।
৪. দান-সদকা:
গরিব-দুস্থদের সাহায্য করার মাধ্যমে রজব মাসে বেশি বেশি দান করা উচিত। এটি শুধু আর্থিক সাহায্যই নয়, বরং আখিরাতের সঞ্চয়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
৫. বিশেষ দোয়া:
রজব মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন:
“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।”
রজব মাসে আমল করার ফজিলত
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রজব মাসে একটি সৎ কাজ করলে তার প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে কোনো পাপ কাজ করলে তার শাস্তি বেশি হতে পারে। তাই মুসলিমদের জন্য এটি আত্মশুদ্ধির মাস।
১. আত্মিক উন্নয়ন:
রজব মাসের আমল ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ সুগম করে।
২. সওয়াব বৃদ্ধি:
এই মাসে করা প্রতিটি ভালো কাজ আল্লাহর দরবারে বিশেষ মর্যাদায় গ্রহণ করা হয়।
উপসংহার
রজব মাস পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, যা মুসলিমদের আত্মিক উন্নতির জন্য এক বিরাট সুযোগ এনে দেয়। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, রোজা ও সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা উচিত। এটি রমজানের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সেরা সময়। সুতরাং, রজব মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করার চেষ্টা করা উচিত।