শিরোনাম: সিগারেটের দাম বৃদ্ধি: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নতুন উদ্যোগ
শিরোনাম: সিগারেটের দাম বৃদ্ধি: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নতুন উদ্যোগ
ভূমিকা
সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। মাঝপথে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সিগারেটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানোর প্রচেষ্টা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে হলেও এটি জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এই আর্টিকেলে আমরা সিগারেটের দাম বৃদ্ধির কারণ, প্রভাব এবং এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো।
—
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির কারণ
সরকার সিগারেটের শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:
1. স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি:
সিগারেটের দাম বাড়িয়ে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমানোর অন্যতম কার্যকর উপায়। বিশেষ করে তরুণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের তামাক গ্রহণের প্রবণতা কমানোই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য।
2. রাজস্ব বৃদ্ধি:
তামাকজাত পণ্য থেকে আসা রাজস্ব সরকারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
3. আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা:
আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তামাকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা আরও বেগবান হবে।
—
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ইতিবাচক দিক
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে একাধিক ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যাশা করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:
১. তামাকের ব্যবহার কমানো
সিগারেটের দাম বাড়লে সাধারণত নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষ সিগারেট কেনা থেকে বিরত থাকে। এর ফলে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসতে পারে।
২. স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন
তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যু ও গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়। সিগারেটের দাম বৃদ্ধি তামাক ব্যবহার কমিয়ে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
৩. পরবর্তী প্রজন্মের সুরক্ষা
তরুণ প্রজন্মের তামাক গ্রহণের প্রবণতা কমাতে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর ফলে তামাকমুক্ত একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব।
৪. পরিবেশ সংরক্ষণ
সিগারেট উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটে। তামাক চাষের জন্য বনভূমি ধ্বংস, কাগজ উৎপাদনে গাছ কাটা, এবং সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দাম বৃদ্ধির ফলে এর ব্যবহার কমলে পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখা যাবে।
—
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক দিক
তবে, এই পদক্ষেপের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যেতে পারে।
১. চোরাচালান বৃদ্ধি
সিগারেটের দাম বাড়লে সস্তায় সিগারেট পেতে অনেকেই অবৈধ উপায়ে চোরাচালানের দিকে ঝুঁকতে পারে। এর ফলে সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
২. নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষতি
অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ তামাকের প্রতি আসক্ত। সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে তারা তামাক ব্যবহার কমাতে বাধ্য হলেও এর জন্য তারা মানসিক চাপ ও আসক্তিজনিত সমস্যায় ভুগতে পারে।
৩. বাজারের অস্থিরতা
দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। এর ফলে এই খাতের সাথে যুক্ত ব্যবসা ও কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে।
৪. বিকল্প পণ্যের ব্যবহার
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষ সস্তা এবং নিম্নমানের তামাকজাত পণ্য যেমন বিড়ি বা চুইং তামাকের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
—
সরকারের পদক্ষেপ
সরকার ইতোমধ্যে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
1. জনসচেতনতা কার্যক্রম:
তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে।
2. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ:
তামাকজাত পণ্যের রাজস্বের একটি অংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সাহায্য করবে।
3. আইন বাস্তবায়ন:
প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ এবং তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
—
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বিভিন্ন দেশে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি একটি পরীক্ষিত নীতি। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, এবং কানাডার মতো দেশে এই পদক্ষেপের ফলে তামাক ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে, এর পাশাপাশি কঠোর আইন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
—
ভবিষ্যৎ করণীয়
সিগারেটের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
1. সতর্কতামূলক লেবেল:
তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের উপর আরও বড় ও কার্যকর সতর্কতামূলক ছবি ও বার্তা যুক্ত করা।
2. প্রতিস্থাপনমূলক প্রোগ্রাম:
যারা তামাক ছাড়তে চান তাদের জন্য পুনর্বাসন প্রোগ্রাম এবং বিকল্প পণ্য সরবরাহ করা।
3. তরুণদের জন্য উদ্যোগ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তরুণদের মধ্যে তামাকবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা।
4. আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগ:
চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
—
উপসংহার
সিগারেটের শুল্ক ও দাম বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এই পদক্ষেপের সঠিক বাস্তবায়ন এবং এর ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প সমাধানের মাধ্যমে তামাকমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করলে এটি দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে।