Bangladesh

বারে ভাঙচুর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বারে ভাঙচুর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বাংলাদেশের বিনোদন জগতের আলোচিত এবং বিতর্কিত চিত্রনায়িকা পরীমনি আবারও সংবাদের শিরোনামে। তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীকে হত্যার চেষ্টা এবং ঢাকার একটি অভিজাত বারে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ঘটনাটি দেশের বিনোদন ও সাধারণ মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

 

ঘটনার বিবরণ

 

গত সপ্তাহে ঢাকার একটি অভিজাত বারে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, পরীমনি তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে বারে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর তর্কবিতর্ক শুরু হয়। তর্কের মাত্রা বাড়তে থাকলে সেটি উত্তেজনায় রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, পরীমনি বারের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং ওই ব্যবসায়ীকে শারীরিক আঘাত করার চেষ্টা করেন।

 

ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পরীমনি ঘটনাস্থলে মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং তিনি উত্তেজিত হয়ে বারের পরিবেশ নষ্ট করেন। এই সময় উপস্থিত অন্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। বারের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, পরীমনি চিৎকার করছেন এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করছেন।

 

আইনি ব্যবস্থা

 

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আদালতে পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আদালত মামলার শুনানির পর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

 

পরীমনির প্রতিক্রিয়া

 

ঘটনার পর পরীমনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসানোর জন্যই এই নাটক সাজানো হয়েছে। আমি কখনো এমন কিছু করিনি।”

 

তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমার চরিত্র হননের জন্য পরিকল্পিতভাবে আমাকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে।”

 

তবে, এটি প্রথম নয় যে পরীমনি এ ধরনের বিতর্কে জড়ালেন। এর আগে ২০২১ সালে তিনি একটি অভিজাত ক্লাবে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। সেই ঘটনা তখন দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল।

 

বিনোদন জগতে প্রতিক্রিয়া

 

পরীমনির বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ উঠায় বিনোদন জগতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক সহকর্মী এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তারকাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত, কারণ তাঁরা সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করেন।

 

অন্যদিকে, কিছু সহকর্মী পরীমনিকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কে জড়ানো হয়েছে। তবে বিনোদন বিশেষজ্ঞদের মতে, বারবার বিতর্কে জড়ানো তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

 

সাধারণ জনগণের মতামত

 

সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ পরীমনির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন, আবার কেউ তাঁর বক্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। একাংশের মতে, সঠিক তদন্ত না করে তাঁকে দোষী বলা উচিত নয়।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, তারকাদের উচিত আরও সংযত আচরণ করা। আবার কেউ বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং পরীমনিকে ফাঁসানোর চেষ্টা।

 

বর্তমান পরিস্থিতি

 

এই মুহূর্তে পরীমনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সঠিক সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তাঁকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। তবে পরীমনি কোথায় আছেন, তা এখনো জানা যায়নি। এই অবস্থায় মামলার পরবর্তী অগ্রগতি কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

 

পরীমনির অতীত বিতর্ক

 

পরীমনি এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২১ সালে তিনি ঢাকা বোট ক্লাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন, যা তখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় ছিল। একই বছর তিনি মাদক মামলায় গ্রেফতার হন এবং কয়েকদিন জেলে ছিলেন। এসব ঘটনার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি।

 

তবে সমালোচকরা বলছেন, বারবার বিতর্কে জড়ানো তাঁর ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের ঘটনা তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি স্বরূপ।

 

উপসংহার

 

তারকা জীবনের সঙ্গে যেমন গ্ল্যামার এবং খ্যাতি জড়িত, তেমনই দায়িত্বশীল আচরণেরও প্রয়োজন। বারবার বিতর্কে জড়ানো একটি তারকার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।

 

পরীমনির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা আদালতে প্রমাণিত হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ঘটনা শুধু একজন তারকার নয়, বরং সমাজের নৈতিকতার দিকটিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক বিচার হবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা|

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button