Bangladesh
Trending

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও তার বর্তমান চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক দশক ধরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে পোশাক শিল্প, কৃষি, প্রবাসী আয় এবং সেবা খাতের উপর। এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ২০০০ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশে ছিল, যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই দেশকে এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু চ্যালেঞ্জ দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, বৈদেশিক ঋণ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামগ্রিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

Copyrighted by https://thenewsalley.com

প্রথম চ্যালেঞ্জটি হলো মুদ্রাস্ফীতি। করোনা মহামারীর পরবর্তী সময়ে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। দৈনন্দিন পণ্য এবং সেবার দাম বাড়ছে, যা নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। মূলত আমদানি নির্ভরতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্য, তেল এবং অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে অনেকাংশে নির্ভরশীল, যার ফলে বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। সরকারের নীতিমালায় পরিবর্তন এনে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি সফল হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।

 

দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেকারত্ব। যদিও বিভিন্ন খাতের বিকাশ ঘটেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তবে বেকারত্বের হার কমানো সম্ভব হয়নি। প্রতি বছর প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষিত যুবক কর্মসংস্থানের জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় তাদের বড় অংশ কর্মহীন থেকে যাচ্ছে। বেকারত্ব দূরীকরণে প্রযুক্তি ও শিল্পখাতের উন্নয়ন জরুরি। তাছাড়া কর্মসংস্থান তৈরিতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন।

 

তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি হলো বৈদেশিক ঋণ। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য প্রকল্পের জন্য প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদী চাপ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য বৈদেশিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তবে ঋণ পরিশোধের জন্য রপ্তানি আয় ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। ঋণ শোধে যদি সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

 

চতুর্থ চ্যালেঞ্জটি হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকলে বিনিয়োগকারীরা দেশের উপর আস্থা রাখতে দ্বিধা করে। এ কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী দেশ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

 

বর্তমানে অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে, যেমন মুদ্রানীতি শক্তিশালীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনা। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভর না করে বেসরকারি খাত এবং জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য বাড়ানো, প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতি স্বাবলম্বী হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা গেলে দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বর্তমান সময়ে চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা যত দ্রুত সম্ভব, ততই দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং জনগণের জীবনমান উন্নত হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও তার বর্তমান চ্যালেঞ্জ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button