Bangladesh

টিকটক বন্ধ: রবিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ নিষিদ্ধ

রবিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে টিকটক

 

 

টিকটক বন্ধ: রবিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ নিষিদ্ধ

 

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসন এবং টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের বিরোধের ফলস্বরূপ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

 

প্রতিদিনের বিনোদন ও সৃজনশীলতার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে টিকটক বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্ল্যাটফর্মটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে নতুন ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন না এবং বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপিত হবে।

 

নিষেধাজ্ঞার পটভূমি

 

টিকটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে এটি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা চীনা সরকারের সঙ্গে শেয়ার করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের মতে, এই তথ্যগুলো চীনা গোয়েন্দাগিরির জন্য ব্যবহার হতে পারে। যদিও টিকটক এ ধরনের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে, মার্কিন সরকার এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।

 

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব ওঠে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। যদিও সেই সময় আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছিল, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৫ সালে একটি নতুন আইনে স্বাক্ষর করেন, যা এই নিষেধাজ্ঞাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করতে সক্ষম করেছে।

 

ব্যবহারকারীদের উপর প্রভাব

 

টিকটক নিষিদ্ধ হলে এর ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারী সরাসরি প্রভাবিত হবেন। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরে অ্যাপটি ডাউনলোড করা সম্ভব হবে না। তবে যারা ইতোমধ্যে অ্যাপটি ব্যবহার করছেন, তারা কিছু সময়ের জন্য এটি চালিয়ে যেতে পারবেন।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবহারকারীরা যারা নিয়মিত এই প্ল্যাটফর্মে ভিডিও তৈরি করেন, তাদের সৃজনশীলতা চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হবে। মার্কিন বাজারে বিভিন্ন প্রভাবশালী ও ব্র্যান্ড যারা টিকটকের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতেন, তারাও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন।

 

টিকটকের প্রতিক্রিয়া

 

টিকটক এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে যে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য তাদের কঠোর নীতি রয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং দাবি করেছে যে এই নিষেধাজ্ঞা দেশটির সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধিকার লঙ্ঘন করছে।

 

টিকটক আরও বলেছে, নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের মার্কিন ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারা মার্কিন অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে, তা ব্যাহত হবে।

 

বিকল্প প্ল্যাটফর্মের উত্থান

 

টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে ব্যবহারকারীরা বিকল্প প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। রেডনোট, ইনস্টাগ্রাম রিলস, ইউটিউব শর্টস এবং অন্যান্য শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম এই সুযোগে মার্কিন বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পর রেডনোট নামক একটি চীনা অ্যাপ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে। তাছাড়া, স্থানীয় মার্কিন কোম্পানিগুলোও এই শূন্যস্থান পূরণে উদ্যোগী হবে।

 

নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

 

নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু ব্যবহারকারীরা নয়, টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মচারী ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। টিকটকের মার্কিন কর্মীদের চাকরির অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। পাশাপাশি, মার্কিন সৃজনশীল সম্প্রদায় এবং ব্র্যান্ড যারা টিকটকের মাধ্যমে প্রচার চালাত, তাদের বিকল্প খুঁজতে হবে।

 

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকটক যদি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়, তবে তাদের হয় কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে অথবা মার্কিন প্রশাসনের দাবিগুলো মেনে চলতে হবে। অন্যথায়, তারা মার্কিন বাজার থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যেতে পারে।

 

তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা প্রযুক্তি খাতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও বড় দ্বন্দ্বের সূচনা হতে পারে। এটি শুধু টিকটকের উপর প্রভাব ফেলবে না, বরং অন্যান্য চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করবে।

 

উপসংহার

 

টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্য একটি বড় পরিবর্তন নির্দেশ করে। এটি শুধু বিনোদন খাতের জন্য নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবাহের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

 

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন বাজারে টিকটকের উপস্থিতি বন্ধ হবে, তবে এটি কি স্থায়ীভাবে হবে নাকি সাময়িক, তা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, টিকটকের নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে এবং অন্যান্য দেশগুলোও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button