InternationalHealth

এইচএমপিভি ভাইরাস: বিশেষ সতর্কতায় থাকা প্রয়োজন এই ৬ ধরনের রোগীর

এইচএমপিভি ভাইরাস: বিশেষ সতর্কতায় থাকা প্রয়োজন এই ৬ ধরনের রোগীর

 

 

সম্প্রতি এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথমবারের মতো একজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এটি দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি (দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি), অ্যাজমা এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ভাইরাস অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

 

এই নিবন্ধে আমরা এইচএমপিভি ভাইরাস, এর লক্ষণ, সংক্রমণ প্রক্রিয়া এবং বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব।

 

 

 

এইচএমপিভি ভাইরাস: কী এবং কীভাবে এটি কাজ করে?

 

এইচএমপিভি একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, যা সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে গুরুতর শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ২০০১ সালে এই ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। এটি মূলত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

 

ভাইরাসের সংক্রমণ প্রক্রিয়া:

 

1. ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি বা সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।

 

 

2. এটি ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

 

 

3. আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়।

 

 

 

 

 

এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণ

 

এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

 

সাধারণ লক্ষণ:

 

হালকা থেকে মাঝারি জ্বর

 

সর্দি বা নাক বন্ধ

 

কাশি এবং গলাব্যথা

 

শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট

 

 

গুরুতর লক্ষণ:

 

ফুসফুসে প্রদাহ (নিউমোনিয়া)

 

রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস

 

শ্বাসতন্ত্রের তীব্র ব্যাধি

 

ফুসফুসে তরল জমা হওয়া

 

 

 

 

৬ ধরনের রোগীকে কেন বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে?

 

চিকিৎসকদের মতে, এই ৬ ধরনের রোগীর জন্য এইচএমপিভি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে:

 

১. ডায়াবেটিস রোগী

 

ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। ভাইরাসটি তাদের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

 

২. উচ্চ রক্তচাপের রোগী

 

উচ্চ রক্তচাপের কারণে শ্বাসতন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হতে পারে, যা ভাইরাস সংক্রমণকে আরও মারাত্মক করে তুলতে পারে।

 

৩. কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি

 

কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসে সংক্রমণ হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।

 

৪. সিওপিডি রোগী

 

সিওপিডি (দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি) রোগীদের ফুসফুসে আগে থেকেই জটিলতা থাকে। এইচএমপিভি তাদের শ্বাসতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

 

৫. অ্যাজমা রোগী

 

অ্যাজমার কারণে শ্বাসনালীতে প্রদাহ থাকে। এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রমণের ফলে শ্বাসকষ্ট আরও তীব্র হতে পারে।

 

৬. ক্যান্সারের রোগী

 

ক্যান্সার এবং এর চিকিৎসা (কেমোথেরাপি) রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই ভাইরাস তাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

 

 

 

এইচএমপিভি প্রতিরোধে করণীয়

 

এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য কিছু বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

 

নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া

 

মুখে মাস্ক ব্যবহার করা

 

ভিড় এড়িয়ে চলা

 

 

২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার, বিশেষত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং সবজি খেতে হবে।

 

 

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

 

শরীরকে বিশ্রাম দিলে ইমিউন সিস্টেম কার্যকরভাবে কাজ করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

 

৪. রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া

 

জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

৫. নিয়মিত ওষুধ সেবন করা

 

যেসব রোগীরা ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, বা উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের নিয়মিত ওষুধ সেবন নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই ভাইরাসের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

তারা আরও পরামর্শ দেন যে, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ফুসফুসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

 

 

 

উপসংহার

 

এইচএমপিভি ভাইরাস একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষত যারা পূর্ব থেকেই জটিল রোগে ভুগছেন। তবে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাই, আতঙ্ক নয় বরং সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব।

Afifa Islam

Afifa Islam is a Bangladeshi journalist and columnist. She has been an influential figure in the Bangladeshi digital news industry for years. Islam is currently the editor and publisher of the online news portal The News Alley (🌐 https://thenewsalley.com), which focuses on technology, social issues, and global affairs. Under her leadership, The News Alley has grown into a trusted source for authentic and engaging journalism in the digital era.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button